• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ধামরাইয়ে যুবককে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ  

প্রকাশ:  ১৩ আগস্ট ২০২২, ২৩:৩৬
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

টিনের একটি ঘর। এক ঘরেই বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে থাকতেন কিশোর শাকিল। তবে তিন বছর আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় তার বোন। দিনমজুর বাবা মেয়েকে খুঁজতে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাধা দেয় তাতে। এরমধ্যে কিশোর ভাই সাবালক হয়েছে। সে ফিরে পেতে চায় তার বোনকে। এজন্যে বিষয়টি নিয়ে শুরু করে তৎপরতাও। এতেই সে পড়ে যায় সেই প্রভাবশালীদের রোষানলে। তুচ্ছ ঘটনায় ঝগড়া বাঁধিয়ে তাকে করা হয় নির্মম নির্যাতন। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে জীবন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে আনে পুলিশ। পরে পুলিশই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

হাসপাতালে ভর্তি শাকিল

ঢাকার ধামরাইয়ের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসে শুক্রবার (১৩ আগস্ট) কথা হয় চিকিৎসাধীন যুবক শাকিলের (২২) সঙ্গে। কথা কাটাকাটি থেকে কি করে এত বড় হলো ভেবেই পান না তিনি। তবে শুধু বলছেন, 'মারতে মারতে তাকে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিল হামলাকারীরা।'

গত ৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের মাখুলিয়া গ্রামে ওই যুবককে দলবেঁধে মারধর করা হয়।

হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম বলতে পেরেছেন তিনি। তারা হলেন, মূলহোতা মৃত রাইসার ছেলে বদরুদ্দিন বদু (৪৫), বদুর ছেলে তন্ময় (১৯), মৃত আজমত আলীর ছেলে বদরুল সরদার ওরফে খাস বদু (৪৮), সেকান্দার মৃধার ছেলে মনির (৪২), বাদশা মিয়ার ছেলে আরশাদ (৪৭), মৃত আলেক মিয়ার ছেলে মনসুর (৪২), আক্কাসের ছেলে হানিফ (৩৯), পলান আলীর ছেলে সবুজ (২৪), করম আলীর ছেলে শওকত (৪২), কাকসেদ আলীর দুই ছেলে আনোয়ার আলী (৫০) ও আফসান আলী (৪৫), সালামের ছেলে শাহীনুরসহ (২২) আরো ২৫-৩০ জন।

হাসপাতালে গিয়ে যখন শাকিলের সঙ্গে কথা হয় তখন কোমর ও পা জুড়ে মারের বেদনায় উঠে বসতেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন তিনি। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় বিনীত সুরে অনুমতি চান শুয়েই কথা বলার।

শাকিল বলেন, ঘটনার সময় বাড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তখনই বদু আমাকে গালি দিয়ে বলে এনে আইছস কেনো। তখন আমিও প্রতিবাদ করি। সেখানে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর আমাকে আমার মা সেখান থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পরই বদু ও মনিরসহ আরো অন্তত ২৫-৩০ জন আমাদের বাড়ি এসে ঘরে ঢুকে প্রথমে মারধর করে। পরে ওভাবে টেনেহিচঁড়ে বাইরে বের করে আনে। সেখান থেকে গ্রামের রাস্তায় এনেও ফেলে মারধর করা হয়। ওই সময় তারা আমাকে রড, লোহার পাইপ দিয়ে পেটায়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে পুলিশ এসে বলে গাড়িতে উঠতে। পুলিশ আসার পর মারধর থেকে রেহাই পাই। এরপর পুলিশ এনে আমাকে হাসপাতালে পাঠায়।

কেনো এই মারধর এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বাবা দৈনিক চুক্তিতে মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। আমার বোন ৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়। আমাদের ধারণা বদু, মনিররাই তাকে অপহরণ করেছে। ওই সময় তারা আমাদেরকে হুমকি-ধামকি দিতো বলে আমার বাবা কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহস পাননি। এখন আমি তো সাবালক হয়েছি। আমি আমার বোনকে ফিরে পেতে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাই। এটাই ওরা জানতে পেরে হয়তো এমনভাবে আমাকে মেরেছে।

এদিকে শাকিলকে টেনেহিচঁড়ে আনতে আনতে পেটানোর একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে। এতে দেখা মেলে এই যুবককে নির্দয়ভাবে পেটানোর দৃশ্য।

শাকিলের নিখোঁজ বোন ছেলে যখন মারধরের বিবরণ দিচ্ছেন পাশেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন মা লাইলি বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ওরা আমার মেয়েকে উধাও করে ফেলেছে। এখন ছেলে বড় হয়েছে। সে ওই ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে চায়। এটা জানতে পেরেই এভাবে ছেলেটাকে মারলো। ৩ বছর বলেছে কোনো মামলা করে কিছু হবে না। আর এখন তারা হাসপাতালে এসে বলে কিছু না করতে। কিছু করলে তারা আমাদের উল্টো মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এলাকায় ফিরলে আবারও মারধর করতে পারে তারা। তবে এবারে আমি বিচার চাই। বিচার না হলে তারা আমার ছেলেকেও বাঁচতে দেবে না।

এদিকে এ ঘটনার পরপরই থানায় অভিযোগ করেছেন তর্কের সূত্রপাত হওয়া ব্যক্তি গৌর কীর্তন মালো। গৌর কীর্তনের করা অভিযোগের কপি থেকে পাওয়া ফোন নম্বরে কল করলে সেটি রিসিভ করেন বদরুদ্দিন বদু। তিনি বলেন, শাকিল মাদকসেবী। সেদিন সে ওই বাড়িতে মাদকের জন্যে যায়। পরে তাকে আটকে মারধর করা হয়। এরপরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।

মারধরের ভিডিও ফুটেজের কথা জানতে চাইলে বদরুদ্দিন বদু বলেন, আমি তখন আহত ছিলাম। তাই কিছু জানি না।

জমিটি ভাড়া নিয়ে এক কক্ষের ঘরটি শাকিলদের তবে কুল্লা ইউনিয়নের মাখুলিয়া এলাকার ইউপি সদস্য পলান আলী বলেছেন আরেক কথা। তিনি বলেন, শাকিল এলাকার বিভিন্ন মেয়েকে নানা প্রলোভন দিত। আমার কাছে অনেকেই বিচার দিয়েছে। ওইদিন গৌর কীর্তনের বাড়িতে ওভাবে এক মেয়ের ঘরে ঢুকলে তাকে আটক করা হয়। পরে সে আমাদের মারধর করে।

ইউপি সদস্যের ছেলেও মারধরে যুক্ত ছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সে ওইখানে ছিল না। ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখা গিয়েছে জানালে তিনি বলেন, আমি তো শুনি নাই। আমি পুলিশে কল দিয়ে বলছি তারা যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে শাকিলকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

ঘটনার খবর পেয়ে তাকে হামলাকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার আরেকজন সহকর্মী মূলত ডিউটিতে ছিলেন। কিন্তু আমাদের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকেও সেখানে যেতে বলেন। পরে আমি গেলাম। দেখি অনেক ভিড়। আর ওই তাকে মারধর করা হয়েছে। কারা মারধর করেছে বলতে পারি না। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। ডাক্তারকে বললাম তাকে ভালো মতো চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। পুলিশ হিসেবে তাকে রক্ষা আমার কর্তব্য। সে যেনো সঠিক বিচার পায়। সেটা আমার কর্তব্য। সেজন্য যা করা দরকার করবো।

আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ও সুস্থ হোক। মামলা দেওয়া যাবে। সুস্থ হোক। তারপর ও যে ব্যবস্থা নিতে চায়, আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এআই

ধামরাই,নির্যাতন,অভিযোগ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close